দ্বিতীয় বিভাগ হকি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা ইয়াংস্টার ক্লাব। শিরোপা জেতার জন্য মাত্র ১ পয়েন্ট দরকার ছিল দলটির। বুধবার (১৭ মে) সেই পয়েন্টর খোঁজেই লিগের শেষ ম্যাচে বর্ণক সমাজের মুখোমুখি হয় তারা। তবে ১ পয়েন্ট নয় বর্ণক সমাজকে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়াংস্টার।
লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ-উৎসব করে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে। চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার মধ্য দিয়ে বহু বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো। দীর্ঘ ৩২ বছর পর দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ হকিতে পা রাখল ঢাকা ইয়াংস্টার ক্লাব।
১ইয়াংস্টার ক্লাবের হকির ইতিহাস বেশ পুরনো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই খেলছে তারা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে খেলেছে দলটি। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে হয়েছিল রানার্স আপ। মাঝে প্রথম বিভাগে খেলার পর ৩২ বছর ছিল নিচের সারিতে। তবে দ্বিতীয় বিভাগের সবশেষ দুই আসর অর্থাৎ ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে সুযোগ ছিল প্রথম বিভাগে পা রাখার।
সেই দুই আসরে দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব এবং রায়ের বাজার স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে কপাল পুড়ে। রানার্স আপে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ইয়াংস্টারকে। একই অবস্থার মধ্যে পড়েছিল এবারের লিগে। রক্তিম সংঘ প্রায় চ্যাম্পিয়নই হয়ে যাচ্ছিল। সেই রক্তিমকে শেষ পর্যন্ত রুখে দিতে সমর্থ হয় তারা। ৬ খেলার ৬টিতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ইয়াংস্টার। ৬ খেলার ৫টিতে জয় এবং ১ হারে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ রানার্স আপ হয়েছে রক্তিম সংঘ।
এবার লিগে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছে ইয়াংস্টার। সাবিত, রাসু, নৈঋত, সামিররা লিগের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছেন। রাসু, সাবিতরা আবার বেশ কয়েকটি ম্যাচে হ্যাটট্রিকও করেছেন। এমনকি আজ লিগ শিরোপা নির্ধারণ ম্যাচেও হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটেছে। হ্যাটট্রিক করেছেন পুরনো ঢাকা আরমানিটোলা স্কুলের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ওস্তাদ ফজলুর আবিস্কার সাবিত। লিগে সর্বোচ্চ ১২টি গোলও করেছেন এই ফরোয়ার্ড।
শিরোপা জেতার পর সাবিত বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। টুর্নামেন্টে আমি ভালো করেছি। অনেকগুলো গোল করেছি। আজও আমার হ্যাটট্রিকে দল জিতেছে। আমার সাফল্যের পেছনে আমার বাবা, মা, ইয়াংস্টারের কোচ, ওস্তাদ ফজলু যার মাধ্যমে আমার হকিতে আসা সবার অবদান রয়েছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
ইয়াংস্টার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোস্তাক হোসেন মনা বলেন, ‘আমরা এই দিনটির জন্য চাতকের মতো অপেক্ষায় ছিলাম। দীর্ঘ ৩২ বছর পর আমাদের দল প্রথম বিভাগে উঠেছে। গেল দুই আসরে আমরা অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। রানার্স আপ ছিলাম। সকলের চেষ্টায় বিশেষ করে আমার কোচ, অফিসিয়াল, খেলোয়াড়দের পরিশ্রমে এই ফল পেয়েছি। প্রথম বিভাগে উঠেছি। সেখানেও আমরা ভালো দল গড়ে প্রতিযোগিতায় নামব।’
প্রথম বিভাগের পর দ্বিতীয় বিভাগ হকিও বেশ ভালোভাবে সম্পন্ন করেছে বর্তমান কমিটি। লিগে কোনো ধরনের বিরতি কিংবা ছেদ পড়েনি। গোলমেলে পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া তো দূরের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দ্বিতীয় বিভাগ লিগে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জামিল আব্দুন নাসের বলেন, ‘লিগ ভালোভাবে শেষ করার সমস্ত কৃতিত্ব আমাদের ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের। ক্লাবকে আর্থিকভাবে তিনি অনুদান দিয়েছেন। এরপরই শুরু হয়েছে লিগ। এর বাইরে লিগ ভালোভাবে শেষ করার কৃতিত্ব আমি দেব লিগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলোকে, খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের। সকলের সহযোগিতায় লিগটা ভালোভাবে শেষ হয়েছে। আমি প্রথমবারের মতো সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। কতটুকু কী পেরেছি, ভালো হয়েছে না খারাপ সেটা বলবে মিডিয়া, আমাদের ফেডারেশন এবং লিগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলো।’
Leave a Reply