প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ অনেকেই আন্দোলন করতে মাঠে নামতে চায়। আন্দোলন করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে আগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কাজ করলে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।
শনিবার নবনির্মিত বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন শেষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত মহাসমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। কতজনের চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়ো গুড়ো করে হত্যা করেছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্ট করলো। তারা সে সময় ২৯ জন পুলিশ সদস্যসহ ৫ শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ৩ হাজার ২২৫ জন লোককে অগ্নিদগ্ধ করেছে। ৩৮৮টি গাড়ি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে।
তিনি আরো বলেন, আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেসব মামলা দ্রত সম্পন্ন করতে হবে। কারণ, এদের যদি সাজা না দেওয়া যায় তাহলে এরা আরো বাড়াবাড়ি করবে। অন্যায়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অগুন সন্ত্রাসীদের বিচার অবশ্যই হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশে যেন আর কোনোদিন বিচারহীনতা আর না চলে। মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। আমরা চাই মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক। কাউকে যেন বিচার পেতে আমাদের মতো ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে না হয়। স্বজন হারিয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট আমরা বুঝি। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বরের জেলহত্যার বিচার করা এই সরকারের অন্যতম সফলতা।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। সরকার বিচার বিভাগের উন্নয়ন এবং আইনজীবীদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে আমরা ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। কারাগারে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ- আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। আপনাদের কল্যাণ ফান্ডে আরো ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আইনজীবীরা এতে অবদান রাখবেন। সরকার আগামীতে জেলায় জেলায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেবে। আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হবো, ততবেশি সবার জন্য সুযোগ তোইরি করতে পারবো। সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে কাজ করবো।
তিনি আরো বলেন, দেশের সব শেণির মানুশই যেন ন্যায়বিচার ও উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। বিএনপির আমলে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ ছিল, আমরা তা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে মাত্র ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উৎপাদন বাড়িয়েছি। এ দেশে কেউ হতদরিদ্র, ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হাতধরেই বাংলাদেশে বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার ৯ মাসের মাথায় কেবল একটি সংবিধানই দেননি, ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২’ জারি করেছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে আইনজীবীদের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ করেন এবং ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে কল্যাণ ফান্ড গঠন করেন। তিনিই নারীদের বিচার বিভাগে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথম উচ্চ আদালতে নারীদের বিচারক হওয়ার ব্যবস্থা এবং দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু প্রমুখ।