পরিবারের বাচ্চা থেকে বড় সব বয়সের সদস্যদের নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বায়োপিক ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ দেখেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে স্টার সিনেপ্লেক্সে সকালের প্রদর্শনীতে পঞ্চমবারের মতো সিনেমাটি দেখা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সম্প্রচারমন্ত্রী। সাংবাদিকরা তার পুত্র সাফওয়ানের সাথেও কথা বলে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, সিনেমাটি সবার দেখা প্রয়োজন। আমি বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। কারণ, মুখে বলে ইতিহাস জানানো যায়, কিন্তু সেটি যখন ছবিতে দেখা হয়, তখন হৃদয়ে গেঁথে যায়। এ জন্য নতুন প্রজন্মেরও সবার সিনেমাটি দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।
তিনি বলেন, এ নিয়ে আমার পঞ্চমবার ছবিটি দেখা হলো। সিনেমাটি বানানোর সময় দু’বার দেখেছি। টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে একবার দেখেছি, তারপর প্রিমিয়ার শো’তে দেখেছি, আর আজ বাচ্চাদের নিয়ে হলে এসেছি।
সিনেমা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এই সিনেমার নামই বলে দেয় ছবিতে কি দেখাচ্ছে ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’, ‘মুজিব-দ্য মেকিং অভ আ নেশন’। এই ছবিটি দেখলে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু কীভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে, বাঙালির স্বাধিকার, স্বাধীনতার প্রশ্নে অবিচল ছিলেন, কীভাবে তিনি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দৃঢ় চিত্তে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
বায়োপিকটির বিশেষত্বের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, সত্যিকার অর্থে তিন ঘণ্টার মধ্যে দেশের ইতিহাস সংক্ষেপে জানা, কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এলো, বঙ্গবন্ধু কীভাবে খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে উঠলেন, সেটি এ ছবিতে চিত্রায়িত হয়েছে।
আমার যথেষ্ট বয়স, তবুও অনেক কিছু আমার দেখা হয়নি যা এ ছবিতে আছে- এমন মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, যেমন সোহরাওয়ার্দীকে আমি দেখিনি। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকেও সেভাবে দেখা হয়নি। কাগজে, পত্র-পত্রিকায় যেটুকু দেখেছি। এবং সবচেয়ে মর্মান্তিক যে বিষয়টি, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এখানে চিত্রায়িত হয়েছে। খুনিরা যে কী রকম পাষণ্ড ছিল, নির্মম ছিল, ১৫ আগস্টের চিত্রায়নটি দেখলে সেটি অনুধাবন করা যায়। আমি পাঁচবার দেখার পরও ইমোশন ধরে রাখতে পারিনি, পারছি না।
উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর থেকে সারাদেশে ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহের প্রায় দুইশ’ পর্দায় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর এ চলচ্চিত্র।
ভারতের শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া ও বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছার বড়বেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। এছাড়া রিয়াজ আহমেদ, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ ও মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক অভিনয়শিল্পী সিনেমাটিতে কাজ করেছেন।
স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’সহ বেশ কিছু সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় কাজ করে প্রশংসিত হন। তিনি সর্বশেষ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায়। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই তাকে বেশি দেখা গেছে।
প্রায় সাড়ে তিন-চার বছরের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ রয়েছেন তিনি। নীরবে, নিভৃতে ধানমণ্ডিতে ছেলের বাসায় দিন কাটাচ্ছেন প্রবীর মিত্র। ৮২ বছর বয়সী এই অভিনেতা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। হাঁটাচলা করতে পারেন না, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, স্মৃতিশক্তিও হারাচ্ছেন। হাঁটুর হাড় ক্ষয়ের কারণে মাঝে অপারেশন করাতে চাইলেও বার্ধক্যজনিত কারণে সেটা করাতে নিষেধ করে চিকিৎসক।
প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, খাওয়া দাওয়া করতে পারেন না। চিকিৎসা আগের মতোই চলছে। ফিজিওথেরাপি নিয়মিত দিতে হচ্ছে।
যে রোগে আক্রান্ত সেটা নির্মূল হবে কি না প্রশ্নের জবাবে গুণী এই অভিনেতার ছেলে বলেন, এটা ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা একিবারে নির্মূল হয় না। গত বছরে ভারতে নেয়া হয়েছিল। সেখানে পায়ের একটা ট্রিটমেন্ট করা হয়। উনি হাঁটতে পারছেন না, পায়ের হাঁটু ক্ষয়ের কারণে। সেটার অপারেশন করতে চেয়েছিলাম। ডাক্তাররা সেটা করতে রাজি হচ্ছে না। তার বলছেন, উনার যে বয়স সেই বয়সে কোনো লাভ হবে না। আর পারকিনসন্স এমনো একটা রোগ যে সেটা ভাল হয় না। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় ঔষধ খেয়ে। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। যতদিন আছেন এভাবেই থাকতে হবে।
উনার সহকর্মী এবং শিল্পী সমিতির তরফ থেকে কোনো খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, না শিল্পী সমিতির তরফ থেকে কোনো খোঁজ খবর নেয় না। বাবা আগে যাদের সঙ্গে কাজ করতেন তাদের কয়েকজন খোঁজ নেয়। মাঝে মাঝে তারা আসেন বাবাকে দেখে যান। যেমন শিল্পী চক্রবর্তী, নায়ক আলমগীর সাহেবসহ আর দুই একজন খোঁজ খবর নেয়। আর কেউ খোঁজ নেয় না।
প্রবীর মিত্রের অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে, জীবন তৃষ্ণা, সীমার, তীর ভাঙা ঢেউ, প্রতিজ্ঞা, অঙ্গার, পুত্রবধূ, নয়নের আলো, চাষীর মেয়ে, দুই পয়সার আলতা, আবদার, নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান ইত্যাদি।
কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
Leave a Reply