পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সুন্দরবনে বাঘ-কুমিরের আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ডলফিন সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় মোট ৬টি ডলফিন অভয়ারণ্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা, পাচার ও এ সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদানকারীকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সরকার সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৯৮ জন অপরাধীকে আটক এবং ১১৬৯টি ট্রলার বা জলযান জব্দ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে বিষ রাসায়নিক প্রয়োগে মাছ ধরার অভিযোগে ৮২ জন আসামিকে আটকসহ ১৭৩ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে ৭৩টি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ সময়ে হরিণ শিকারের অভিযোগে ৭৭ জন আসামিকে আটকসহ ১৯৯ জন আসামির বিরুদ্ধে ৫৪টি মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সুপেয় পানীয় জল সরবরাহের জন্য চারটি নতুন পুকুর খনন এবং ৮৪টি বিদ্যমান পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে বন বিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, স্টেশন, রেঞ্জে অকেজো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। সহ-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, ইকোলজিক্যাল মনিটরিংয়ের ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত এবং টহলের জন্য জলযান ক্রয় করা হচ্ছে। ইকোটুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ চলমান।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার মোট ২৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, বিজ্ঞানভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজ চলমান।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সুন্দরবনের অধিকতর টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ভূমি ও সামুদ্রিক ব্যবস্থার বাস্তুসংস্থান উন্নয়নে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো গবেষণা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকায় ভবিষ্যতের সমস্ত শিল্প কারখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সময় সুন্দরবনের ওপর প্রভাব মূল্যায়নে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ ও অহংকার। সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে বাড়ানো হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রণালয় ও বন অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।