বাংলা সিনেমার নবাব, বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে তিনি অভিনয় করেছেন অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা স্বীকৃতি ও কোটি দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। বর্ণিল অভিনয়জীবনে চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন প্রবীর মিত্র।
স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’সহ বেশ কিছু সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় কাজ করে প্রশংসিত হন। তিনি সর্বশেষ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায়। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই তাকে বেশি দেখা গেছে।
প্রায় সাড়ে তিন-চার বছরের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ রয়েছেন তিনি। নীরবে, নিভৃতে ধানমণ্ডিতে ছেলের বাসায় দিন কাটাচ্ছেন প্রবীর মিত্র। ৮২ বছর বয়সী এই অভিনেতা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। হাঁটাচলা করতে পারেন না, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, স্মৃতিশক্তিও হারাচ্ছেন। হাঁটুর হাড় ক্ষয়ের কারণে মাঝে অপারেশন করাতে চাইলেও বার্ধক্যজনিত কারণে সেটা করাতে নিষেধ করে চিকিৎসক।
প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, খাওয়া দাওয়া করতে পারেন না। চিকিৎসা আগের মতোই চলছে। ফিজিওথেরাপি নিয়মিত দিতে হচ্ছে।
যে রোগে আক্রান্ত সেটা নির্মূল হবে কি না প্রশ্নের জবাবে গুণী এই অভিনেতার ছেলে বলেন, এটা ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা একিবারে নির্মূল হয় না। গত বছরে ভারতে নেয়া হয়েছিল। সেখানে পায়ের একটা ট্রিটমেন্ট করা হয়। উনি হাঁটতে পারছেন না, পায়ের হাঁটু ক্ষয়ের কারণে। সেটার অপারেশন করতে চেয়েছিলাম। ডাক্তাররা সেটা করতে রাজি হচ্ছে না। তার বলছেন, উনার যে বয়স সেই বয়সে কোনো লাভ হবে না। আর পারকিনসন্স এমনো একটা রোগ যে সেটা ভাল হয় না। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় ঔষধ খেয়ে। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। যতদিন আছেন এভাবেই থাকতে হবে।
উনার সহকর্মী এবং শিল্পী সমিতির তরফ থেকে কোনো খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, না শিল্পী সমিতির তরফ থেকে কোনো খোঁজ খবর নেয় না। বাবা আগে যাদের সঙ্গে কাজ করতেন তাদের কয়েকজন খোঁজ নেয়। মাঝে মাঝে তারা আসেন বাবাকে দেখে যান। যেমন শিল্পী চক্রবর্তী, নায়ক আলমগীর সাহেবসহ আর দুই একজন খোঁজ খবর নেয়। আর কেউ খোঁজ নেয় না।
প্রবীর মিত্রের অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে, জীবন তৃষ্ণা, সীমার, তীর ভাঙা ঢেউ, প্রতিজ্ঞা, অঙ্গার, পুত্রবধূ, নয়নের আলো, চাষীর মেয়ে, দুই পয়সার আলতা, আবদার, নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান ইত্যাদি।
কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
Leave a Reply